নন-টেক প্রজেক্ট ম্যানেজার বা বস হলো শখের ক্যাপ্টেন

November 29, 2024
No Comments
1 min read

একজন নন-টেক প্রজেক্ট ম্যানেজার বা বসের প্রযুক্তিগত জ্ঞান সীমিত থাকলে, ডেভেলপার বা টেক পেশাজীবীদের সাথে কাজ করার সময় কিছু সমস্যাজনক বা ক্ষতিকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, তারা হয়তো পুরো জাহাজের (প্রজেক্ট) দায়িত্বে আছেন, কিন্তু সমুদ্রপথে (প্রযুক্তি) চলার অভিজ্ঞতা নেই, এসব সমস্যার বিশদ ব্যাখ্যা নিচে দেওয়া হলো:

১. অবাস্তব সময়সীমা বা ডেডলাইন নির্ধারণ

  • সমস্যা:
    • নন-টেক ম্যানেজাররা অনেক সময় কোডিং বা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের জটিলতা না বুঝে কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য অবাস্তব সময়সীমা ঠিক করে দেন।
    • তারা ভাবতে পারেন, "এটা তো স্রেফ একটা বাটন যোগ করা!" কিন্তু এর পেছনের লজিক, টেস্টিং, এবং ইন্টিগ্রেশনের কাজ সম্পর্কে ধারণা না থাকায় সঠিক সময় নির্ধারণে ব্যর্থ হন।
  • ফলাফল:
    • ডেভেলপারদের উপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়।
    • মানহীন কোড লেখার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
    • দীর্ঘমেয়াদে টিমের মধ্যে হতাশা ও বার্নআউট দেখা দেয়।

২. প্রকৃত অগ্রাধিকার না বুঝা

  • সমস্যা:
    • টেকনিক্যাল কাজের গুরুত্ব এবং প্রভাব বোঝার অভাবে ম্যানেজাররা কখনো কম গুরুত্বপূর্ণ ফিচারে বেশি সময় ব্যয় করতে বলেন, আর গুরুত্বপূর্ণ বাগ ফিক্সিং বা অপ্টিমাইজেশন উপেক্ষা করেন।
    • যেমন, UI পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়া হতে পারে, অথচ ব্যাকএন্ডের একটি সিস্টেম ক্র্যাশ সমস্যার সমাধানকে অগ্রাহ্য করা হয়।
  • ফলাফল:
    • প্রকল্পের সময়মতো সমাপ্তি বাধাগ্রস্ত হয়।
    • পণ্যের মান খারাপ হয় এবং ক্লায়েন্ট অসন্তুষ্ট হয়।

৩. টেকনিক্যাল চ্যালেঞ্জকে হালকাভাবে দেখা

  • সমস্যা:
    • কিছু নন-টেক ম্যানেজার মনে করেন ডেভেলপমেন্ট খুবই সহজ বা দ্রুততার সাথে করা সম্ভব।
    • "এটা তো একটা ছোট কাজ, কালকেই করে ফেলুন" — এই ধরনের নির্দেশনা আসতে পারে।
  • ফলাফল:
    • ডেভেলপারের কাজের প্রকৃতি এবং চ্যালেঞ্জ উপেক্ষা করা হয়।
    • টিমের মধ্যে হতাশা বা কাজের মানসিক চাপ বাড়ে।

৪. অপ্রয়োজনীয় মাইক্রোম্যানেজমেন্ট

  • সমস্যা:
    • ম্যানেজাররা প্রতিটি ছোট ছোট বিষয় সম্পর্কে জানতে চান বা হস্তক্ষেপ করেন, যদিও তারা টেকনিক্যাল দিক বোঝেন না।
    • যেমন, "এই কোডের এই লাইনটা কেন লিখেছেন?" কিংবা "এই ফিচার আগে কেন কাজ করল না?"
  • ফলাফল:
    • ডেভেলপারের স্বাধীনতা এবং সৃজনশীলতা বাধাগ্রস্ত হয়।
    • সময় নষ্ট হয় এবং কাজের গতি কমে যায়।

৫. টিম কমিউনিকেশন বা বোঝাপড়ার ঘাটতি

  • সমস্যা:
    • নন-টেক ম্যানেজাররা ডেভেলপারদের ভাষা বা টেকনিক্যাল টার্ম বুঝতে পারেন না।
    • যেমন, API, CI/CD, বা Deployment-এর মতো টার্ম সম্পর্কে ভুল ধারণা থাকতে পারে।
  • ফলাফল:
    • টিমের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়।
    • ডেভেলপারের করা ব্যাখ্যাগুলো ঠিকমতো গ্রহণ না করতে পারার কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমস্যা হয়।

৬. প্রযুক্তিগত কাজের গুরুত্বকে অবমূল্যায়ন

  • সমস্যা:
    • ডকুমেন্টেশন, টেস্টিং, এবং কোড রিভিউ-এর মতো কাজগুলোকে অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয় না।
    • "ক্লায়েন্ট তো টেস্টিং দেখতে পারবে না, তাই এটাতে সময় নষ্ট করবেন না" — এমন মানসিকতা থাকতে পারে।
  • ফলাফল:
    • কোডের গুণগত মান খারাপ হয়।
    • ভবিষ্যতে মেইনটেন্যান্সে বড় সমস্যা তৈরি হয়।

৭. প্রোডাক্টের ফলাফল সম্পর্কে ভুল বোঝা

  • সমস্যা:
    • একটি ফিচার ডেভেলপ করার পর সেটি বাস্তবে কীভাবে কাজ করবে বা এর সীমাবদ্ধতা বুঝতে ব্যর্থ হন।
    • যেমন, তারা আশা করেন ১০০০ জন ব্যবহারকারী একসাথে একটি ফিচার ব্যবহার করবে, অথচ সেটি স্কেল করার জন্য পর্যাপ্ত সময় এবং পরিকল্পনা করা হয়নি।
  • ফলাফল:
    • ক্লায়েন্ট বা স্টেকহোল্ডারদের অতিরিক্ত প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, যা পরে পূরণ করা সম্ভব হয় না।
    • প্রোডাক্ট লঞ্চের সময় বিভ্রাট ঘটে।

৮. টেক টিমের প্রতি অবিশ্বাস

  • সমস্যা:
    • টেক টিমের কাজের জটিলতা বুঝতে না পারার কারণে মনে হতে পারে ডেভেলপাররা যথেষ্ট কাজ করছেন না বা সময় নষ্ট করছেন।
    • "আপনারা কি সারা দিন শুধু কোডেই কাজ করছেন?" — এ ধরনের প্রশ্ন করতে দেখা যায়।
  • ফলাফল:
    • ডেভেলপারদের মধ্যে হতাশা এবং কাজের প্রতি আগ্রহ হারানোর ঝুঁকি বাড়ে।
    • টিমে বিশ্বাসের অভাব তৈরি হয়।

৯. ভবিষ্যৎ-প্রস্তুতি নিয়ে উদাসীনতা

  • সমস্যা:
    • স্কেলেবিলিটি, নিরাপত্তা, এবং ভবিষ্যৎ ফিচার অ্যাড করার পরিকল্পনা নিয়ে ভাবা হয় না।
    • শুধু বর্তমান ডেলিভারির উপর ফোকাস করা হয়।
  • ফলাফল:
    • প্রজেক্ট দীর্ঘমেয়াদে ব্যর্থ হয়।
    • ভবিষ্যতে বড় পরিবর্তনের জন্য আরও বেশি সময় ও খরচের প্রয়োজন হয়।

সমাধান:

১. মৌলিক প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জন করা: ম্যানেজারদের উচিত প্রযুক্তিগত বিষয়ের প্রাথমিক ধারণা নেওয়া। ২. টেক লিডের উপর ভরসা করা: প্রযুক্তিগত সিদ্ধান্ত এবং সময়সীমা নির্ধারণে টেক লিডদের পরামর্শ নেওয়া। ৩. স্বচ্ছ যোগাযোগ বজায় রাখা: ডেভেলপারদের মতামত এবং সমস্যাগুলো শোনা এবং সেগুলো বুঝে সমাধান করা। ৪. বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা করা: কাজের অগ্রাধিকার এবং সময় নির্ধারণে টেক টিমের সঙ্গে আলোচনা করা। ৫. স্বীকৃতি দেওয়া: ডেভেলপারদের কাজের গুরুত্ব এবং পরিশ্রমের স্বীকৃতি প্রদান করা। ৬. প্রোডাক্টের গুণগত মানে গুরুত্ব দেওয়া: ডকুমেন্টেশন, টেস্টিং, এবং কোডের স্থায়িত্বের প্রতি মনোযোগ দেওয়া।

এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করলে নন-টেক ম্যানেজার এবং ডেভেলপারদের মধ্যে কার্যকর সহযোগিতা সম্ভব। এটি প্রকল্প সফল করার পাশাপাশি টিমের মধ্যে সুস্থ সম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য করে।

©2025 Linux Bangla | Developed & Maintaind by Linux Bangla.